সিলেট ও আমার শৈশব – দ্বিতীয় পর্ব
একদিন সকাল 9 টার সময় শুনলাম হইচই! হিন্দুপাড়া থেকে আসছে ;দৌড়ে গেলাম ;
দেখলাম পুকুরের পাড়ে দমকল এর গাড়ি এবং কিছু ডুবুরি পুকুরে মধ্যে কিছু একটা খুজার চেষ্টা করছে!
কিছুক্ষণ পর 19/20 বছরের এক যুবককে কাঁধে নিয়ে একজন উঠে আসলো !
কেউ বলল, ওই যুবকটিকে কাঁধে নিয়ে নিয়ে ঘোরাতে থাকো এবং যুবকটির মুখ দিয়ে লালা পরছিল;
আমার এখনো ষ্পষ্ট মনে পড়ছে! তাকে আর বাঁচানো যায়নি!
এমন একটি ঘটনা দেখেছিলাম এটা 5 বছরের বাচ্চার;
ওই সময় সিলেটের সব বাড়িতে একটা করে চৌবাচ্চা থাকতো! পানি র অসুবিধা হয়তো ছিল! বিকেলে বাবা-মা ঘুমোচ্ছিল আর বাচ্চা খেলতে খেলতে চৌবাচ্চায় ডুবে গিয়েছিল !
ওই বাচ্চাকে নিয়ে বাবা মা দুজনেই রিক্সা করে কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতলে গিয়েছিল পরে ফিরে এসেছিল! সেটা এখনো মনের মধ্যে গেঁথে আছে!
হিন্দুপাড়ার একটু পরে ছিলো আর সি অফিস ও বাসা !
আরসির ছেলে তৈমুর আমার বন্ধু ছিল !
ওই বাসার সামনে একটা ছোট মাঠ ছিল; ওইখানে আমরা ফুটবল খেলতাম!
আর বাসার একটু পাশেই একটা ঘর ছিল একটু আলাদা ;
সেখানে আড্ডাটা দিতাম !
আমরা ঠিক করলাম যে একটা নতুন ফুটবল কিনব;
চাঁদা তুলতে লাগলাম; একসময় তিন টাকা হল !
দলবেঁধে ফুটবল কিনার জন্য চলতে লাগলাম দুপুর তিনটার দিকে;
দোকানটা বেশ দূরে ছিল রং মহল সিনেমা হলের পাশে ;
একটি দোতলা ঘর ,তার উপরে স্পোর্টস জিনিসপত্র একটি দোকান ছিল !
তখন আমাদের লিডার ছিল তৈমুর ;
ফুটবল কিনে আমরা সবাই হৈ হৈ করতে করতে আমাদের পাড়ায় ফিরে আসলাম!
আমাদের মহল্লা টির নাম ছিল তোপখানা !
আমাদের কম্পাউন্ডের ভেতরে আমরা অনেক দুষ্টামি করতাম!
কম্পাউন্ডের ভেতরে একটি ওয়ার্কশপ ছিল ,পাশে ঢালাই কারখানা ছিল !
ওখানে গাড়ি ট্রাক ইত্যাদির পার্টস তৈরি করা হতো!
আমাদের কম্পাউন্ডের শেষ মাথায় বিরাট জায়গা ছিল,
সেখানে বিপুল পরিমাণ রড রাখা হতো !
আমরাও এর ফাঁকে ফাঁকে লুকোচুরি খেলা খেলতাম!
জায়গাটাকে আমরা কয়লার ড্রাম বলতাম ;
আলকাতরার ড্রাম রাখা হতো কখনো কখনো !
বাড়ির পাশের পুকুর থেকে আমি বরশি দিয়ে মাছ ধরতাম,
অনেক পুটি মাছ ধরতাম!
একটু বড় হলে বড় মাছ ধরার চেষ্টা করেছি ;
তবে মৃগেল ছাড়া অন্য কিছু ধরতে পারিনি !
তবে পড়শী তে জ্যান্ত পুটি মাছ গেথে নিয়ে শোল মাছ ধরতে পেরেছি !
তৈমুর ও আমরা একবার ঠিক করলাম এয়ারগান দিয়ে আমরা সালুটিকর গিয়ে পাহাড়ে উঠবো ! আমরা দশ বারোজন কিছু খাবার নিয়ে সালুটিকর গেলাম;
এয়ারপোর্টের পাশে!
সেটা মনে হয় আমার ক্লাস সিক্সে থাকা অবস্থায় !
আমরা একটা পাহাড়ে আস্তে আস্তে উঠে পড়লাম এবং পথ হারিয়ে ফেললাম !
চারদিকে গাছ আর গাছ ;
আমরা বুঝতে পারতেছিলাম না,
আমরা নিচে যাচ্ছি, না উপরে যাচ্ছি !
অনেক ভয় পেয়ে গেলাম! আমাদের সাথে একটা এয়ারগান ছিল আর একটা বড় ছুরি ছিল ! একজন এয়ারগান নিয়ে সামনে থাকলাম আরেকজন ছুরি নিয়ে সবার পেছনে !
লাইন করে আমরা এগোতে লাগলাম বুক ধুকপুক করছিলো তারপর হঠাৎ করে আমরা নিচে র রাস্তা পেয়ে গেলাম!