দ্বিপ্রহর ও ৩০ পৃষ্ঠা
সাধারণত আমরা বলি বা উচ্চারণ করি, সকাল বিকাল দুপুর, যদিও বিকালের আগে দুপুর,তবুও বিকাল আগে উচ্চারিত হয় ।
সকালের একটা ব্যাঞ্জনা আছে, বিকালের ও একটা ব্যাঞ্জনা আছে কিন্তু দুপুর হলো, দ্রুত লয়ে কেটে যাওয়া কিছু সময়। বেলা একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত সময়টাকে দুপুর বলে অভিহিত করা হয় বা দ্বিপ্রহর বলে অভিহিত করা যায়।
একটি নাটকে দেখেছিলাম দ্বিপ্রহরে ঘরে হঠাৎ প্রবেশ করার দরুন,বৃদ্ধ মাস্টার স্বনামধন্য নাট্যকার হাদী , আগন্তুক নুরকে বকা দিচ্ছেন। এবং বলে যাচ্ছেন, দুপুর সময়টা অত্যন্ত ব্যক্তিগত, এ সময়টা কেউ কারো বাসায় সাক্ষাতের জন্য আসতে পারে না। দুপুরের সময়টা যদিও দু’ঘণ্টা বা আড়াই ঘন্টা, এটা অত্যন্ত দ্রুত লয়ে চলে যায় গোসল, নামাজ ও ভোজনের সাথে। গত কয়েক মাস যাবত আমি দুপুরে একটা 30 পৃষ্ঠার চক্করে পড়ে গেছি। কথাটা উল্লেখ করে নিশ্চয়ই ভীষণ কৌতুহলের উদ্রেক করে দিয়েছি সবার মনে। নিম্নে ব্যাপারটি খোলাসা করছি।
প্রায় দুমাস আগে ধানমন্ডির বিভিন্ন গাছে টাঙানো হয়েছে কতগুলো কাঠের বক্স, যার মধ্যে গল্পের বইয়ের সমাহার।এই সুন্দর ব্যাপারটির উদ্যোক্তা একজন ভদ্রমহিলা। ওই কাঠের বক্সে রাখার জন্য ওই ভদ্র মহিলার কাছে আমি প্রায় ৩০ টি বই পাঠিয়েছিলাম তার মধ্যে ১৫টি বই আমার নিজস্ব বা আমার নিজের লেখা। আমি দুপুরের ঘর থেকে বের হই একটা সময় অথবা ০১ঃ১৫ মিনিটে।
যদি একটা সময় বের হয় তবে আমি তাকওয়া মজিয়ে চলে যাই কিন্তু একটা ১৫ মিনিটে বের হলে, আমি ধানমন্ডি ৭ নম্বরের বায়তুল মামুর মসজিদে চলে যাই যেখানে জামাত দেড়টায়। সাধারণত মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর লেকের পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরি, কিছুটা আনন্দ ভ্রমন বলা যায়। তাকওয়া মসজিদ ও ডিঙ্গির মাঝখানে দুই তিনটি জায়গায় বইয়ের বক্স আছে। আবার সাত নম্বর মসজিদও ধানমন্ডি ৮ নম্বর গোল চক্কর এর মাঝখানে দুই তিনটি বইয়ের বক্স আছে।
আজকের কথাই বলি। মসজিদ থেকে বেরিয়ে বক্সে হাত দিলাম এবং হুমায়ূন আহমেদের একটি বই পেলাম, মিলার গ্রাম। বসে বইটি পড়তে শুরু করলাম, গ্রামের ভ্রমণ ভালোই লাগছিল। আশেপাশে চার পাঁচ জন বয়স্ক লোক গল্প করছে, ওই পাশে চার পাঁচটা টিনেজার বসে আছে।প্রায় নিস্তব্ধ দুপুর। দূরে লেকের মধ্যে একটি স্থাপনায় দুই তিনটি সেই তথাকথিত টুকাই লেকে ঝাঁপ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ।একটির বয়স সাত আট হবে সেটি ন্যাংটা অন্য দুইটির বয়স ১০-১১ হবে।
প্রায় আধা ঘন্টার মধ্যে মিলার গ্রামের বইটির ৩০ টি পৃষ্ঠা পড়ে ফেললাম। তারপর যথারীতি বইটি বক্সে রেখে বাসার দিকে হাঁটা শুরু করলাম। প্রায় এমনটাই ঘটেছিল ১৫-২০ দিন আগে তাকওয়া মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর।
বক্স থেকে একটি বই নিলাম, খান বাহাদুর আহসানুল্লাহর জীবন কাহিনী। প্রায় ২০০ বছর আগের পট ভূমিকা। পড়তে পড়তে দেখলাম উনি পীর ফকিরের অনেক ভক্ত ছিলেন। এবারও ৩০ মিনিটে ৩০ পৃষ্ঠা পড়ে ফেললাম এবং তারপর বই পড়া বন্ধ করে বইটি যথাস্থানে রেখে দিলাম এবং বাড়ির দিকে ছুটলাম হেঁটে হেঁটে। কিছুদিন যাবৎ আমার দুপুরটা এভাবেই কাব্যময় ভাবে কেটে যাচ্ছে।
**২৬ শে জানুয়ারি 2025