নির্জন গ্রামের আদলে রিসোর্ট
আমরা প্রত্যেকেই স্বাদের ভিন্নতা পছন্দ করি ।অনেক সময় আমরা ভিন্ন একটা স্বাদ নিয়ে প্রচলিত জীবনধারায় কিছুটা ব্যতিক্রম আনতে চাই। হঠাৎ করে আমাদের মাছের বারবিকিউ খেতে ইচ্ছে হয় আবার হঠাৎ করে কেউ কেউ লইট্টা শুটকি খেতে পছন্দ করে। তেমনভাবে জীবনযাত্রার মাঝে একটি ব্যতিক্রমী স্বাদ নিতেই আমরা নির্জনতা ঘেরা একটি রিসোর্ট পছন্দ করলাম ,
ইকো মারমেড রিসোর্ট ইনানী।
ওখানে বারোটি সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি কক্ষ আছে কংক্রিটের কোন বালাই নেই ,
মনে হবে যে ওই সময় কংক্রিট এর জন্মই হয় নাই।
booking.com দিয়ে আমি এই রিসোর্ট এর একটি কক্ষ বুক করেছিলাম ৯ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে। সরাসরি book করতে পারলে ২০% কম হতো কিন্তু সরাসরি নাম্বার পাওয়া খুব দুষ্কর গুগুলে। বেলা বারোটার সময় কক্সবাজারের বেস্ট ওয়েস্টার্ন হোটেল থেকে ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে ছুটলাম ইকো মারমেড এর দিকে। আমি গত তিনদিন এই হোটেলে অবস্থান করছি এবং ভিন্ন একটি স্বাদ নেওয়ার জন্য এক রাত্রির নির্জনতার দিকে যাচ্ছি। রিসোর্ট এ পৌঁছার পর রিসেপশনে কিছু লেখালেখি করতে হলো। তারপর আমাদের বরাদ্দকৃত রুমের দিকে ছুটলাম। বেশ কিছুক্ষণে হেঁটে কতগুলো কাঠের কক্ষ পার হয়ে আমাদের কক্ষটিতে পৌঁছলাম। কক্ষটি সুন্দর কিন্তু অনেক ছোট হওয়াতে হতাশ হয়ে পড়লাম।
তবে সৌভাগ্য সঙ্গে থাকা হাউস কিপার এর অ্যাসিস্ট্যান্ট আমাদেরকে তার বসের সাথে আলাপ করে এই রিসোর্ট এর সবচেয়ে ভালো ও বড়রুমটি ঠিক করে দিল। ২০০০ টাকা বেশি দিতে হবে ওই ফেসিলিটি নিতে গেলে। তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেলাম কারন ভালো রুম না পেলে টূরটাই
নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ ভিন্ন স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা বিস্বাদেপরিণত হতে পারে। কক্ষটি অনেক বড় এবং
সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি
কাঠের আসবাবপত্রে সাজানো এবং টয়লেটের টুকটাক সবকিছুই কাঠের কেবল কমোডও বেসিন ছাড়া। আমাদের বাংলোর পাশেই হচ্ছে পরপর দুইটি রেস্টুরেন্ট, রেস্টুরেন্টের উল্টা পাশেই সাগরের একাংশ। রেস্টুরেন্টে বসে সাগরের ঝিরঝির হাওয়ার সাথে বৈকালিক নাস্তা খাওয়াটা বেশ জমে উঠেছিল।
পরদিন সকাল সাতটায় রেস্টুরেন্টে একা আসলাম তখন আশেপাশে কেউ নেই
সবাই তখন নিদ্রায় বিভোর। প্রায় এক ঘন্টা একাকীত্ব ও নির্জনতা উপভোগ করলাম সাগরের পানে চেয়েও মোবাইলে পুরনো হিন্দি গান শুনে।
এখানে যারা এসেছে,
অধিকাংশই সদ্য বিবাহিত কাপোল বয়স অনেক কম । আমরা যেন তাদের মধ্যে কাবাবের মধ্যে হাড্ডি। তবে নির্জনতাকে উপভোগ করার জন্য বয়সের কোন বাঁধন থাকতে পারে না।
তাদের ভদ্র ও চুপচাপ আচরণ দেখে বেশ ভালো লাগলো।
আগেই বলছি রেস্টুরেন্টের পাশেই সাগরের একাংশ এবং সাগরের পারে বিশাল ঝাউ বন।
রেস্টুরেন্টে বসে খুব ভালোভাবে সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। যদিও মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য আমরা সেটা উপভোগ করতে পারি নাই সূর্য হঠাৎ করেই ডুবে গেল। সন্ধায় ঘোরাঘুরি শুরু করলাম, উদ্দেশ্য ভালোভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা। সন্ধ্যার সাথে সাথে আলো জ্বলে উঠলো চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠলো, সারিসারি আলো গুলো যেন
সুন্দর সুন্দর ফানুস। রিসোর্ট এর বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট কাঠের ব্রিজ আছে সেগুলোও আলোকসজ্জিত করে তোলা হয়েছে। এই মুহূর্তে নির্জনতায় ঘেরা ইকো মারমেড রিসোর্ট টি স্বপ্নপুরীর মতই মনে হচ্ছিলো।
পরদিন সকল নয়টার সময় কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট খেতে দ্বিতীয় রেস্টুরেন্ট এ ঢুকলাম। আয়োজনে সেরকম বাহুল্য নেই কিন্তু সুন্দরভাবেই সবকিছু গোছানো। আমরা সাগরের দিকে মুখ করার দুটি চেয়ারে বসে পড়লাম। নাস্তার সাথে সাথে চমৎকার পেঁপের জুস খেলাম।
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম সাগরের এপার থেকে একটা বস্তার উপর বসে একটা এগারো বারো বছরের ছেলে ওপারের দিকে যাচ্ছে, ঢেউয়ের জন্য সেই পিছাতে পিছাতে পরে এক সময় ওপারে পৌঁছে গেল। কিসের বস্তা সেটা বুঝতে পারলাম না যেটা ভেসে থাকে। পূর্ব থেকে ভাড়া করা গাড়িটি বেলা বারোটায় এসে আমাদের নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এক কিলোমিটার দূরের মারমেড বিচ রিসোর্ট এ একটু ঘোরাফেরা করার ইচ্ছা ছিল ,তাই তাকে এগারোটার সময় আসতে বললাম। ইকো মারমেড এবং মারমেড বিচ রিসোর্ট
দুটি একই মালিকের অধীনে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিএনজি করেই কক্সবাজারের কলাতলির বেস্ট ওয়েস্টার্ন হোটেলে আসতে হলো কারণ আমাদের ভাড়া করা গাড়িটি এক্সিডেন্ট করার জন্য সময়মতো পৌঁছতে পারেনি।
শহরের কোলাহল ওজীবনের কলতান থেকে এক রাতের জন্য নির্জনতা উপভোগ করলাম।
ভিন্ন স্বাদের এই ভ্রমণ অনেকদিন মনে থাকবে।