হঠাৎ জীবনের প্রথম হাতে পাওয়া আশি টাকার কথা মনে পড়ে গেল,
সেটা ছিল ক্লাস নাইনের মাঝামাঝি সময়।তখন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে পড়তাম এবং ক্লাস এইট ছিল আমার জন্য একটা স্মরণীয় বছর।


অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষায় ইংলিশের দুই পেপারে হাইয়েস্ট মার্ক পেয়েছিলাম। সাথে সাথে ভালো ছাত্রের তালিকায় আমার নাম উঠে গেল স্কুলের টিচারদের কাছে। আমি ক্লাস সেভেনে ওই স্কুলে এসে ভর্তি হয়েছিলাম। এর পূর্বে আমি সিলেট গভরর্মেন্ট পাইলট স্কুলে ছিলাম। ওখানেও প্রতি বছর আমার রেজাল্ট ভালই হতো, সিরিয়ালে আমার নাম থাকতো, চার বা পাঁচ। বুয়েটের প্রয়াত প্রফেসর মোহাম্মদ আলী ও আমার ক্লাসমেট ছিল, তার সাথে ওই সময় আমার কিছুটা কম্পিটিশন হতো।


যদিও পরবর্তীতে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের আকর্ষণে শুধুমাত্র পড়াশোনা করে ভাল ছাত্র খেতাবটা ধরে রাখতে পারি নাই।
এবার রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের স্মৃতি রোমন্থনে চলে আসি। দিনরাত অত্যন্ত পরিশ্রম করে এবং একজন টিচারের কাছে দুই মাস পড়াশোনা করে
ক্লাস এইটের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম এবং রাজশাহী বোর্ডে চতুর্থ স্থান অধিকার করলাম। সম্ভবত দৈনিক বাংলা পত্রিকায় আমার একটি ছবি ছাপা হয়েছিল,
সেটা আমারই ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়।


তখন প্রথম গ্রেডের স্কলারশিপে প্রতি মাসে ৪৫ টাকা পাওয়া যেত যেটা অবিশ্বাস্য একটা বড় অংকের টাকা তখনকার যুগে।
বলতে গেলে একটা টাকাওয়ালা ছাত্র হয়ে গিয়েছিলাম এবং পরবর্তীতে একসময় বান্ধবীর কে 40 টাকা দামের চার আনা সোনার আংটি উপহার দিয়েছিলাম।
এখন আশি টাকার গল্পটা বলি। বইপত্র কেনার জন্য বছরে আশি টাকা দেওয়া হতো। ক্লাস নাইনের মাঝা মাঝি সময়ে টাকাটা হাতে আসলো।

নিম্নে সেই টাকার বন্টন নামা উল্লেখ করছি —-
টাকা পাওয়ার সাথে সাথেই সাহেব বাজারের বিখ্যাত জলজোগ মিষ্টান্ন ভান্ডারে ঢুকে গেলাম এবং দশ টাকায় দুই, তিন হাড়ি মিষ্টি কিনে বাসায় ফিরলাম। উল্লেখ্য তখন মাটির হাড়িতে মিষ্টি বিক্রি হতো।
পরদিন সকালবেলা আদম নামে আমার এক স্কুল বন্ধু বাড়িতে এসে উপস্থিত হল, পাঁচটি টাকা ধার চাইল। যথারিতি তাকে পাঁচটি টাকা দিলাম। বান্ধবীকে আট টাকার হোয়াইট ফেদার কলম উপহার দিলাম।

ক্লাসে তখন আমার আট, নয়জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল তাদেরকে মিষ্টির দোকানে নিয়ে, পেট ভরে মিষ্টি খাওয়ালাম, ওখানে দশ টাকা চলে গেল। তখন তো আমি গল্পের বইয়ের পোকা ছিলাম। সম্ভবত গল্পের বই কিনে কিছু টাকা খরচ করেছিলাম।
এর বেশি মানে নাই,
স্মৃতি ঝাপসা হয়ে আসছে,
সেই ৫০ বছর আগের কথা।

এখানে আরেকটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়, বৃত্তি পাওয়া উপলক্ষে একটি বিচিত্রা অনুষ্ঠান করেছিলাম বাড়ির আঙিনায়। ওই অনুষ্ঠানে নাটক নাচ গান-বাজনা সবই ছিল। অনুষ্ঠানটি আমার, আজাদ ও কাঞ্চনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হয়েছিল এবং নাটকে আমি নায়ক হয়েছিলাম যদিও নায়িকা ছিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *