সিলেট ও আমার শৈশব – প্রথম পর্ব

0

আমাদের বাড়ির সম্মুখে একটি পুকুর ছিল !তারপর বড় রাস্তা তারপর সুরমা নদী!
আমাদের কম্পাউন্ড টা বেশ বড় ছিল !
তিনজন ইঞ্জিনিয়ারের বাসা ছিল; আর কিছু অধঃস্তন অফিসার ওখানে থাকতেন!
আমাদের পশ্চিম ছিল হিন্দু পাড়া;
পূর্ব দিকে পুলিশ পারা ;
ওখানে একটি থানা ছিল এবং থানার পাশে কোয়ার্টারগুলো কে পুলিশ অফিসার থাকতো !
আমি প্রায় সময় থানার কাছে ঘোরাফেরা করতাম ও অনেক কিছু দেখতাম!
কাউকে ধরে নিয়ে আসার পর একটা 2 ফুট রোলার দিয়ে পিটানো হত তারপর একটি বদ্ধ ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হতো!
ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল, জানলা বন্ধ থাকতো ,
উপরের ভেন্টিলেটর দিয়ে আলো আসত! আমি একবার ঘরটি দেখেছিলাম!
একবার দেখলাম এক কৃষক ধরে আনা হয়েছে ;
সাথে একটা চাটাই এর মধ্যে একটি মৃতদেহ !
শুনলাম ভাত খেতে এসে রাগে কৃষক তার বউকে দা দিয়ে কুপিয়ে দিয়ে মেরে ফেলেছে! বেচারা একদম গোবেচারার মত মত মাথা নিচু করে বসে আছে!
আরেকবার দেখলাম একটা জোয়ান লোক মাটিতে করে শুয়ে থানার সামনে !
পরে শুনলাম লোকটিকে ইলেকট্রিক পোস্টে করতে কাজ করতে গিয়ে ইলেকট্রিক শট খেয়ে মারা গেছে !
একবার থানায় অনেক ভিড় হইচই শুনলাম;
ছেলে ধরা ধরা পড়েছে !
সবার কৌতূহল ছেলেধরা দেখতেই হবে !
থানার দারোগা এক পর্যায়ে ছেলে ধরা কে এনে আমাদেরকে দেখালেন !
একটা মাঝবয়সী লোক,
লুঙ্গি পরা !ছেলে ধরা এত সাধারন হবে ভাবতে পারি নাই!
আমি দুর্গাকুমার পাঠশালায় পড়তাম ;একটা পুরনো ভাঙাচোরা বিল্ডিং ছিল !
তখন ক্লাসে হাতের লেখা লিখতে হতো !
গুরুজনকে মান্য করিবে সদা সত্য কথা বলিবে ইত্যাদি !
আমি সদা শব্দের অর্থ তো বুঝতাম না ;
ক্লাসে সদা নামে একটি হিন্দু ছেলে ছিল ;আমি ভাবতাম ওকে বলা হচ্ছে সত্য কথা বলার জন্য!
ক্লাস থ্রি থেকে সিলেট গভর্মেন্ট পাইলট স্কুলে পড়েছিলাম;
ওখানে অনেক স্মৃতি এখনো জ্বলজ্বল করছে !
ক্লাস ফোর ,ফাইভে ক্যাডেট কাব ছিলাম !
স্বাধীনতা দিবস তখনকার 14 ই আগস্ট স্কুল থেকে মার্চ করে বেশ দূরে বড় মাঠে যাওয়া হতো!
প্রায় তিন চার ঘন্টা অনুষ্ঠান হতো,
ফেরত যাবার পথে একটি রেস্টুরেন্টে আমরা বসে থাকতাম অনেকক্ষণ !
হঠাৎ কিছু মিষ্টি আসতো প্লেটে করে !
ঐসময় হেঁটে হেঁটে স্কুলে ফিরতে হত বেশ ক্লান্ত হয়ে যেতাম ;
মনে পড়ে !
ক্লাস ফাইভে মনির নামে একটি ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে দিয়েছিলাম;
দাঁত দিয়ে রক্ত পড়ছিল!
পরে হেডমাস্টার আমাকে শাস্তি দিলেন প্রকাশ্যে পাঁচটি বেত!
ক্লাস ফোরে ;
ইউএসআইএস লাইব্রেরীর মেম্বার হয়েছিলাম !
মেম্বার হবার জন্য একটা হলুদ কার্ডে হেডমাস্টারের সই এর দরকার ছিল !
হেডমাস্টারের কাছে যেতে সাহস হয়নি ;
তার সহি নকল করেছিলাম!
তখন থেকে বই পড়ার নেশা ছিল,
ওই লাইব্রেরীতে বসে অনেক সময় কাটাতাম ;বই পড়তাম !

দুইটি বইয়ের কথা মনে পড়ছে,
হতভাগ্য সৈনিক ও দুই দিগন্ত !এই বইটিতে একটি বিদেশি মেয়ের নাচের ছবি ছিল !
এর বেশি কিছু এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না !
ক্লাস সিক্সে আমরা দল বেঁধে ইউএসআইএস লাইব্রেরীর বই চুরি করা শুরু করলাম !আমার কাছে প্রায় 20, 25 টি বই জমে গিয়েছিল!
আমার বন্ধুর কাছে ছিল 30, 40!
টি বই !
তবে একদিন গিয়ে আমার সমস্ত বই লাইব্রেরী ম্যানেজারের কাছে দিয়ে আসলাম!
ওখানে প্রতি রবিবার ফিল্ম দেখানো হতো ,
বড়রা প্রথমে ভিতরে ঢুকতো ফিল্ম দেখার জন্য ;
জায়গা খালি থাকলে আমাদের বসিয়ে দেওয়া হতো একেবারে সম্মুখে ;
অনেক সুন্দর সুন্দর ডকুমেন্টারি দেখানো হতো মনে পড়ে!
তখনকার কেনেডিকে দেখানো হয়েছিল এবং লিন্ডন জনসন কে একবার !সেই সময়কার ছবিগুলো দেখে অত্যান্ত শিহরন জাগতো ;
স্মৃতি ঝাপসা হয়ে আছে!
চলবে—

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *