আহসানুল্লাহ হালের স্মৃতিকথাও হাজতবাস (শেষ পর্ব)

0

পুলিশকে দেখেও কখনো কখনো মানুষের কলিজা ঠান্ডা হয়,
সেই অভিজ্ঞতাও হল।পুলিশের গাড়ি রাত একটার সময় আমাদেরকে তেজগাঁ থানায় এনে হাজতে ঢুকিয়ে দিল। বিমান বাহিনী আমাদের বিরুদ্ধে অনেকগুলা ধারায় মামলা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিল। ওই পরিস্থিতিতে আমরা মামলা টামলার তোয়াক্কা করছিলাম না, আর্মির হাত থেকে বাঁচার জন্য যে কোন পন্থাই আমাদের কাছে স্বস্তিদায়ক ছিল।
হাজতের মধ্যে আমরা ছয়জন আলাপে লিপ্ত হলাম,বিগত ছয় ঘন্টা একত্রে থাকলেও আমরা নিজেদের মধ্যে কোন কথাই বলতে পারিনি। এখনো মনে আছে ঢাকা ভার্সিটির দুই জন ছাত্রের একজনের নাম ছিল ফোরকান। আমাদের বয়সী তেজগাঁও তেজকুনি পাড়ার মাস্তানটির নাম ছিল সমীর।
পরবর্তীতে ওদের দুজনের সাথেই আমার সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। দারুন তেজকুনিপারা উল্টোদিকে মনিপুরী পাড়ায় আমার বা আমাদের কিছুটা যাতায়াত ছিল। আমাদের (আমি আলমগীর আনিস) কমন গ্রুপ গার্লফ্রেন্ড ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের শামীমার বাসা ওইখানে ছিল।
এবার হাজতে ফিরে আসি।
হাজতের ভিতরে কিছুটা দুর্গন্ধ কারণ ভিতরেই পি করার ব্যবস্থা।
তেজগাঁও থানার ওসি আমাদের থেকে সবকিছু জানলো,এবং
আমাদের সাথে ভাল আচরণ করেছিলেন।
মধ্যরাতে জাসদের সেই মনির ভাই চলে আসলেন কলা বিস্কুট ইত্যাদি নিয়ে। সবার প্রতি মনির ভাইয়ের আন্তরিক স্নেহ ভালোবাসা ছিল।সেই কারণেই এখনো পর্যন্ত উনি প্রকৌশলী সমাজে সমাদৃত।
ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়া হক ভাই ক্যাম্পাসে এসে আমাদের বিষয়টা অনেক কে অবহিত করেছিল।
সকালবেলা টেলিফোনের মাধ্যমে আমি কলাবাগানে আমার নানার বাড়িতে খবর পাঠালাম এবং জামাল বিশ্বাস তার এক আত্মীয় উকিলের কাছে খবর পাঠাল। থানায় আমার মেজ মামা আসলেন। কিছুক্ষণ পর আমার বড় ভাই ও আসলেন, ঘটনাচক্রে ঐ সময় উনি নানাবাড়িতে ছিলেন।তারপর জামাল বিশ্বাসের আত্মীয় উকিল সাহেবও চলে আসলেন। উকিল সাহেব এবং আমার বড় ভাই সারাটা দিন , রাত নয়টা টা পর্যন্ত আমাদের আশেপাশে ছিলেন এবং আমাদের জামিনের জন্য দৌড়োদৌড়ি করেছিলেন।

ইতিমধ্যে আমাদেরকে গাড়িতে করে তেজগাঁও থানা হাজত থেকে ঢাকা কোর্ট প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়েছে।
কিছুক্ষণ ওখানে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হলো। তারপর জেলহাজতের দিকে নিয়ে যাওয়া হল। জেলহাজতে ঢোকার সময় কতগুলো মহিলা কায়েদি চিৎকার করে বলতে লাগল, টাকা-পয়সার ঘড়ি ওখানে জমা দিবেন না, জেল গেটে দিবেন। আমরাও তাই কোন কিছুই কোর্ট হাজতে জমা দিলাম না।
আমাদেরকে প্রথমে একটা বড় খাঁচায় ঢোকানো হলো যেখানে বিশাল বিশাল দেহের অধিকারী কতগুলো লোক তাস খেলছিল বসে বসে। তাদেরকে দেখে আমাদের আত্মারাম খাঁচাছাড়া। অবশ্য কিছুক্ষণ পর আমাদেরকে আরেকটা ভিন্ন খাঁচায় নিয়ে যাওয়া হল। ১২ঘন্টা আদালত প্রাঙ্গণের কোট হাজতে ছিলাম।
অনেক বিচিত্র বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল। হাজত থেকেও আসামিদের টাকার বিনিময়ে দুই,তিন ঘন্টার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রতিমুহূর্তে চলছে টাকার খেলা। টাকার বিনিময় সেবা-যত্ন ও পাওয়া যায়।

এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেল কিন্তু আমাদের জামিনের কাগজ জেলহাজতে পৌঁছে নাই। উদ্বিগ্ন চিত্তে আমরা অপেক্ষায় থাকলাম; শেষ পর্যন্ত রাত 9 টায় জামিনের কাগজ কোর্টের হাজতে পৌঁছে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *