কাশবন
শরতের মিছা মেঘ,
আর শরতেই কাশবন।
করোনার আগে পূর্বাচলের কাশবনে গিয়েছিলাম। এবং একবার বসুন্ধরার এম ব্লকেও কাশবন দেখেছি ।
এবার শরৎ আসার পরপরই কাশবনের কথা মনে পড়ল। ভাবলাম পূর্বাচল যাব।
কিন্তু ব্যাটে বলে এক না হওয়াতে,শরৎ প্রায় শেষ কিন্তু
কাশবন দেখা হয়নি।
আজ ঈদে মিলাদুন্নবীর একটি ছুটি।
বউকে বললাম রেডি হতে, বারোটার সময় কাশবন দেখতে যাব,উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে।আমার এক বন্ধু ওখানে গিয়ে ছবি তুলেছে,
তার কাছেই জায়গাটার খবর শুনেছি।
তাই উত্তরা যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। বউ শ্লেষ মাখা কন্ঠে বলে উঠলো, এই দিন দুপুরে কী কাশবন দেখার সময়!
আমি উত্তর না দিয়ে,
মনে মনে ভাবলাম, দেখি না কি হয়!
কারণ সকালে রোজকার মত ধানমন্ডি লেকের পাড়ে হাঁটার সময় আকাশে কালোমেঘ লক্ষ করেছিলাম,যদিও পরবর্তীতে তা চলে যায়।তবুও মনে মনে আশা করলাম যদি আকাশটা একটু নরম হয় তবে কাশবন দেখাটা সফল হতে পারে।
কিন্তু উত্তরায় ১৮নম্বর সেক্টরে গিয়ে কাশবনটা তো খুঁজে বের করতে হবে!
ধানমন্ডি থেকে গাড়ি,
মানিক মিয়া এভিনিউ ক্রস করার সময় ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হল।
গাড়ির উইন্ড স্ক্রিন ভিজে গেল। কাকতালীয়ভাবে এটা দৈব ঘটনাই বটে।
কিন্তু আমি তখনও বুঝতে পারিনি যে সামনে আরো বড় বিশ্বয় অপেক্ষা করছে।
এয়ারপোর্টের কাছে বলাকার নিকটে পৌছানোর পরই ঝুম ঝুম বৃষ্টি শুরু হল। বৃষ্টি ক্রমে ক্রমে প্রবল বর্ষণে রূপ নিল,
সামনেটা বৃষ্টির তোড়ে ঝাপসা হয়ে আসলো। এই পরিস্থিতিতে গাড়ির বেক লাইট জ্বালাতে হয়।
পাচ সাত মিনিট এমনটা চলল।
আমার মনে হলে এক ঢিলে দুই পাখি। কারণ প্রবল বর্ষণে মধ্যে গাড়িতে চলন্ত অবস্থায় আমার অত্যন্ত রোমাঞ্চিত লাগে।
তাই কাশবনের সাথে সাথে অন্য একটা আকর্ষণও পূর্ণ হল।
উত্তরায় প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি নেই। সামনের রাস্তা সম্পূর্ণ শুকনো।
এখন ঢাকার বৃষ্টি আগের মত নেই। একসময় বৃষ্টি মানেই,
সারা ঢাকায় মুষলধারে বৃষ্টি। এখন ধানমন্ডিতে বৃষ্টি হলে, উত্তরাতে হয়না। মতিঝিলে বৃষ্টি হলে, ধানমন্ডিতে হয়না। মালয়েশিয়াতে এমনটা দেখেছিলাম।
এবার আসি আবার কাশবনের কথায়।
উত্তরা 7 নম্বর সেক্টর দিয়ে চললাম।জিজ্ঞেস করে করে 14 নম্বর সেক্টর খুঁজে পেলাম, কিন্তু 18 নম্বর সেক্টর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অনেকক্ষণ গাড়ি চলল।
গাড়ি এদিকসেদিক ঘোরাঘুরি করে একপর্যায়ে একটা নিরালা বিরান জায়গার কাছে আসলো। এবং কিছুদূর যাওয়ার পরই
দূরে কাশবনের দেখা মিলল।
আমরা গাড়ী থামিয়ে ওখানে নেমে পড়লাম। রাস্তার পাশ ঘেঁষে খাল চলে গেছে, তার উল্টা পাশেই কাশবন।
আমাদের পাশ দিয়ে একটি বাচ্চা ছেলে যাচ্ছিল,
আমার বউ তাকে বলল,
আমাদের কাশবনে নিয়ে চল। বাচ্চা ছেলেটি খালের পাশ দিয়ে
পথ দেখিয়ে আমাদের নিয়ে চলল। কিছু দূর হাঁটার পর একটা ছোট্ট ব্রিজ পার হলাম।
বাম পাশেই রাস্তার কিছু দূরে বিশাল কাশবন।
আলমগীরের কথা মনে পড়ল। আফা ফ্যাক্টরি প্রায় চালু হওয়ার পথে, কিন্তু ফার্নেস ম্যান জোগাড় হয়নি, আলমগীরের অলসতার জন্য । আলমগীর আবার হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা কাজ, যেভাবে হোক,
করে ফেলে। ১৯৮৭ র জুলাই মাসের এক সকালে আমাকে নিয়ে কাঁচপুরের দিকে চলল ফার্ণেস ম্যান জোগাড় করার জন্য। তখন কাঁচপুরে অনেকগুলি রোলিং মিল ছিল।অধিকাংশই বন্ধ ছিল। আলমগীর আমাকে নিয়ে একের পর এক রোলিং মিলে হানা দিতে লাগলো। প্রায় 4,
5 ঘন্টা হন্যে হয়ে ঘোরার পর কাঙ্খিত বস্তুটিকে পাওয়া গেল। অর্থাৎ আলমগীর একদিনের মধ্যেই ফার্নেস ম্যান যোগাড় করে ফেলল।
জীবনে ওই ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে
আমাকে ও অনেক কিছু করতে হয়েছে।
দশ পনেরো দিন যাবত,
কাশবন কাশবন করতে করতে শেষ পর্যন্ত কাশবনের দেখা মিলল, দৃঢ় সংকল্পের ফলে,
এবং শরৎ শেষ হওয়ার আগেই।
রচনাকাল ;রাত দশটা.
9 অক্টোবর।