১৬ ই ডিসেম্বরের আত্মসমর্পণে নেপথ্যে

0

হঠাৎ  এসে গেল ১৬ই ডিসেম্বর, পাকিস্তান আর্মি সারেন্ডার করল।

 আমরা বিজয় পেয়ে গেলাম।একটি নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম হলো।

 কিন্তু  তখন আমরা মনে মনে প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম হয়তো আর এক মাস যুদ্ধ করবে পাকিস্তান আর্মি, বিল্ডিং-এ বিল্ডিং-এ আশ্রয় নিবে,

লক্ষ লক্ষ লোক ঢাকায় মারা যাবে।

*বাস্তবে  হলো অন্যরূপ হঠাৎ করেই পাকিস্তানের আর্মি,  ইন্ডিয়ান আর্মি কাছে সারেন্ডার করল 16 ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্সে।*

কেন এটা হয়েছিল?

এর কারণ কি আমরা জানি? এটা কখনো  আলোচনা করা হয় না।

ইন্ডিয়ান আর্মি অফিসারদের  বুদ্ধিমত্তা, দূর দৃষ্টি অনেক বেশি ছিলএবং তারা সমস্ত বিষয়টা বুঝেছিল, যুদ্ধ স্থায়ী হলে বা ডোর টু ডোর যুদ্ধ হলে কি অবস্থা হবে এবং কোথায় গিয়ে এর শেষ হবে, পরিণতিতে পাকিস্তান আর্মির কি অবস্থা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

তাই ঠান্ডা মাথায় তখনকার ইন্ডিয়ান চিফ অরোরা,

বার্তা পাঠায় নিয়াজির কাছে। একই বার্তা  অনেকবার পাঠাতে হয়।বারবার পাঠায় ঠান্ডা মাথায়।

প্রথমে নিয়াজী কিছুই মানতে চায় নাই, ক্ষণে ক্ষণে ক্ষেপে যাচ্ছিল, সারেন্ডার করতে চায় নাই,

যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চেয়েছিল শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত।

*কিন্তু অরোরার কাছে বারে বারে কঠিন  বাস্তবতা বুঝে সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবংশেষ পর্যন্ত  ইন্ডিয়ার আর্মির কাছে সারেন্ডার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।*

এখানে উল্লেখ্য যে তখনো ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তান আর্মি যেমন ছিল এবং তাদের বউ বাচ্চাও ছিল।

ইন্ডিয়ান চিফ আরোরা  এটা বুঝাতে সক্ষম হয় যে, যুদ্ধ  ১৫ দিন বা এক মাস পর্যন্ত চলবে, কিন্তু  তারপর তো এমুনেশন ফুরিয়ে যাবে পাকিস্তান আর্মির। তাদের কোনো সাপ্লাইয়ের লাইন নেই।

পাকিস্তান আর্মির অ্যামুনেশন ফুরিয়ে গেলে কি হবে??

সেই আতঙ্ক টাই ইন্ডিয়ান অফিসাররা পাকিস্তানী আর্মি অফিসারদের  বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল।

ইন্ডিয়ান আর্মি চিফ বলেছিল, এখন সারেন্ডার করলে, আমরা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী তোমাদের সুরক্ষা দিব এবং তোমাদের বউ-বাচ্চাদের পাকিস্তান পাঠিয়ে দিব।

কিন্তু এখন যদি তোমারা সারেন্ডার না করো এবং যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাও, যুদ্ধ চালাবো ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ তোমাদের অ্যামুনেশন শেষ না হয়।

*তোমাদের এমুনেশন  শেষ হওয়ার পর আমরা ঢাকায় প্রবেশ করব না।*

যখন দা-কুড়াল,  রাইফেল দিয়ে মুক্তিবাহিনী প্রবেশ করবে, সাথে সাথে সাধারণ জনতা অংশ নেবে।

তোমাদেরকে নিশংসভাবে কচুকাটা করবে, তোমাদের বউ ছেলেমেয়েরাও মারা যাবে।

এটা ছিল এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা।

 যা বুঝে সাথে সাথেই নিয়াজী সারেন্ডার করার  সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়,সমস্ত বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে।

পশ্চিম পাকিস্তানের সকল মানুষ,  আত্মসমর্পণকে মেনে নিতে পারে নাই, অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখেছিল। নিয়াজীর বাসার সামনে দিয়ে গেলে ওখানে থুতু নিক্ষেপ করত  প্রত্যেক পাকিস্তানি !

আর আত্মসমর্পণ করার ৯০০০০ সৈন্য বাহিনীকে কে বরখাস্ত করা হয়।

আমি ১৯৭৮ সালে আবুদাবি গিয়েছিলাম সাথে আলমগীরও গিয়েছিল।ওই আত্মসমর্পণ করা অনেক সাধারণ মিলিটারি সেই আবুধাবি দুবাইয়ে   সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো,এমনটাই দেখতে পেয়েছিলাম!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *