পঁচিশ টাকা
ব্যবসার উত্থান-পতন আছে।
কখন লাভে চলে, কখনো break-even এ চলে,
কখনো বা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
আফাতেও ব্যতিক্রম ছিল না।
আফা সবচেয়ে বেশি প্রফিট করে 95 থেকে 2000 সাল পর্যন্ত।
আফার দুর্দিনের বছর ছিল 93।ঐ বছরটা আনিস আফার সম্পূর্ণ দায়িত্বে ছিল। আমি,
বলতে গেলে এক প্রকার ছুটিতে ছিলাম। ঐ সময় আলমগীর নোয়াখালীতে ম্যাক্স কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়ায় ছিল। তাই সেও আফাতে সময় দিত না।
ওই বছর মার্কেট সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল,
তাই ক্যাশ ফ্লো তেমন ছিল না।
তখন আমি অফিসে কম যেতাম।
আমার এক আত্মীয় আফার হেড অফিসে কাজ করতো।
একদিন সে এসে বললো,
চায়ের রং কালো হয়ে গিয়েছে!
অর্থাৎ অফিসে এখন দুধ চা খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
ওই বছর আমি প্রচন্ড অর্থ কষ্টে ছিলাম। জীবন শুরু করেছিলাম আবুধাবির রমরমা চাকুরী দিয়ে। তাই কোন সময়ই অর্থকষ্টে পড়তে হয়নি। 87এ অফার কমার্শিয়াল প্রোডাকশন শুরু হয়। প্রথম থেকেই আফার পণ্য মার্কেটে সুনাম অর্জন করে। আমরা প্রতিবছরই ভালো লাভের মুখ দেখি।
কিন্তু 93 সালে আফা প্রথমবারের মতো break-evenও চলতে পারে নাই।
92 এর শেষের দিকে আমার ইস্টার্ন প্লাজার লেডিস গার্মেন্টস এর দোকান টি চালু হয়। তাই 93এর ছুটিতে আমি কাপড়ের ব্যবসা বোঝার চেষ্টা করলাম। সবেমাত্র মার্কেট চালু হয়েছে,
তাই বেচা কিনা ছিল খুবই নগণ্য।দোকান থেকে তেমন টাকা-পয়সার নেয়ার সুযোগ ছিল না।
ওই বছর আমি ড্রাইভার ছেড়ে দিয়েছিলাম। নিজেই ড্রাইভ করতাম আমার ছোট্ট টু,ডোর পাবলিকা গাড়িটি। দোকানদারি করে দুপুরে বাসায় চলে যেতাম, খাওয়া-দাওয়া করে আবার বিকেলে ফিরে আসতাম। দোকানদারি করে বেশ মজা নিচ্ছিলাম। এবং নিয়তির চক্রে ওই বছরের শেষের দিকে মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক
মনোনীত হলাম। তারপর পরবর্তী 10 বছর মার্কেটের অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকলাম।
এখনো 25 টাকার গল্পটি বলা হয়নি। একদিন দুপুরে দোকান থেকে বাসায় যাব না বলে,
মনস্তির করলাম। তখন তিন বাচ্চাই ছোট।বাসাটা দুপুরে হৈহৈ রৈরৈ এ উত্তপ্ত থাকে । তাই মাঝে মধ্যে বাসায় না গিয়ে
বাইরে লাঞ্চ সেরে নেই।
সেদিন আমার পাবলিকা গাড়িটি নিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য বের হলাম।
পকেট এ কিন্তু মাত্র 25 টাকা।
কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করলাম, হঠাৎ লক্ষ্য করলাম কাটাবন মোড় এর একপাশে লালসালু দিয়ে ঢাকা বিরানির ডেকচি। রাস্তার উপর ছোট প্লাস্টিকের চেয়ারের উপর বসে পড়লাম। আয়েশ করে বিরিয়ানি খেলাম।
মাত্র 25 টাকা।