আমার ভয়ঙ্কর বিপদও বন্ধু বারী
গতকালের মিনি গেট টুগেদারে, অর্থাৎ জুলাই 30 তারিখে সাব্বিরের উপস্থিতির আড্ডায় হঠাৎ বারী এসে উপস্থিত হল।বারীকে দেখে বহু বছর আগের একটি ঘটনার কথা মনে পড়ল। বারী, আমার একটা ভয়ঙ্কর বিপদে ঝাপিয়ে পড়েছিল 42 বছর আগে,
সেটা অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি।
1980 সালে আবুধাবি থেকে আমি এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসলাম। প্রথমদিন সন্ধ্যাবেলায় পুতুল আমাকে নিয়ে গেল মোহাম্মদপুর রাজার বাসায়।গিয়ে দেখলাম রাজা বারী এবং অন্যান্য কয়েকজন ব্যাডমিন্টন খেলছে। এক পর্যায়ে পুতুল বলল,
তোর পকেটে টাকা আছে?
আমরা বিয়ার খাব।
পরিবাগের কোন একটা রেস্তোরাঁয় গেলাম বিয়ার খেতে।
মনে পড়ে আসর জমিয়ে তুলেছিল রাজা , চরম হাসি ঠাট্টা চলছিল—-
ছোট ছোট ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে
সবাই রসের হাড়িতে হাত ঢুকাচ্ছিল ।
সময়ের সাথে বয়সের সাথে সব কিছু পাল্টে গেছে। ওই সময়কার রস আস্বাদন করা এখন অসম্ভব। বর্ণনা করা আরো অসম্ভবও বিব্রতকর।
বারীর কথায় আসি।সবসময় বন্ধুদের ডাকে সাড়া দেয়,
বন্ধুদের প্রয়োজনে কাছে এসে দাঁড়ায়। অনেকটা আলুর মত যে কোন তরকারিতে দেয়া যায়। ভালো অর্থেই উপমাটা দিলাম।
ওই সময় গান শোনার একটা প্রচন্ড আকর্ষন ছিল আমাদের সবার মধ্যেই। আবুধাবিতে আমার কয়েক শত ক্যাসেট ছিল। তখনতো ক্যাসেট প্লেয়ারের যুগ।কোন এক সকালে বাটা সিগনাল এর পাশে গীতাঞ্জলি তে গেলাম কতগুলি পছন্দের গান রেকর্ড করাতে।আমার সাথে একটি ছোট্ট ব্যাগ ছিল, তাতে আবুধাবির ভিসা লাগানো পাসপোর্ট ছিল।গান পছন্দ করা ও
দোকানদারের সাথে কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম,
আমার পাশে রাখা ব্যগটি উধাও, পাসপোর্ট সহ।
মাথায় যেন একটা বজ্রপাত হলো। কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমার অবস্থা দেখে দোকানদার ও ভয় পেয়ে গেল। পাসপোর্ট যদি ফিরে না পাই তবে আমার আবুধাবি যাওয়া শেষ, জীবনটা ওই জায়গায় থেমে যাবে। আবার হয়তো নতুনভাবে জীবন শুরু করতে হবে।
আমি রিক্সা করে মতিঝিল চলে গেলাম। মতিঝিল তখন jveর ফারুক, পুতুলের একটি অফিস ছিল, ওদের সাথে রাজা,বারী ছিল।
গিয়ে দেখলাম ওরা সবাই মিটিং করছে। আমি ঘটনা খুলে বললাম। সাথে সাথে বরী উঠে দাঁড়ালো, বাইক নিয়ে আমাকে নিয়ে সা সা করে এলিফ্যান্ট রোডে সেই দোকানে উপস্থিত হল।ইতিমধ্যে সেখানে এলিফ্যান্ট রোডের আরেকজন পরিচিত বন্ধু মামুন এসে উপস্থিত হলো।
সবাই মিলে অনেক হইচই হইচই শুরু করলো, কিন্তু পাসপোর্ট পাওয়া গেল না। উধাও তো উধাও!
সিদ্ধান্ত হলো থানায় গিয়ে রিপোর্ট করার। আমরা তিনজন থানায় গিয়ে উপস্থিত হলাম।
এমনসময় গীতাঞ্জলি দোকান থেকে থানায় ফোন আসলো , পাসপোর্ট পাওয়া গেছে!
আমি যখন গীতাঞ্জলিতে গান পছন্দ করছিলাম,
তখন আমার পাশের লোক ভুল করে ব্যাগটি নিয়ে চলে গিয়েছিল,
সে থাকতো মোহাম্মদপুর।
ব্যাগে ভিসাসহ পাসপোর্ট দেখে সে তড়িঘড়ি করে ফিরে এসে গীতাঞ্জলিতে পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছিল।
আমার সাথে ওই ভদ্রলোকের দেখা হয় নাই। তাই তার প্রাপ্য ধন্যবাদটুকু দিতে পারি নাই।
(এখনকার সমাজে,কি
ঐরকম বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন ভদ্রলোক আছে!)
রচনাকাল ঃ
রবিবার,৩১.০৭.২২
সকাল ১০ ঘটিকা।