গাড়ি ও সমুদ্র সৈকত
কুয়াকাটা পৌঁছলাম বেলা পৌনে তিনটায়,নিজের গাড়িতে। সাড়ে সাত ঘণ্টা লেগে গেল। পথে বরিশালের একটি রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করেছি।রেস্টুরেন্টের নামটি কস্তুরী হলেও অত্যন্ত সাধারণ মানের । আশেপাশে কোন ভালো হোটেল খুঁজে পেলাম না।
ডালভাত করলা ভাজি ছোট সরষে বাটা ইলিশ মাছ খলাম।ইলিশের রান্নাটি সুস্বাদু ছিল।
ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে কুয়াকাটার হোটেলটি খুঁজে পেয়েছিলাম যার নাম গ্রেভার ইন ইন্টারন্যাশনাল। একটি থ্রি স্টার হোটেল —-কিন্তু এখানে অনেক অসহনীয় অভিজ্ঞতা হল। পরে জানতে পারলাম এখানে একটি মাত্র ফোর স্টার হোটেল আছে, শিকদার, কিন্তু সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় দেড় কিলো দূরে। গ্রাভার ইন হোটেলটি সমুদ্র তীর ঘেঁষে, এর অন্যতম আকর্ষণ এর পিছনের বিরাট লন,যেখানে বসে মাছের বারবিকিউ খাওয়া যায়।
বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বের হয়ে হোটেলের পিছন দিকের লনের গেট দিয়ে মাত্র তিন মিনিটে সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে গেলাম। সৈকতে প্রচন্ড ভিড় কারণ মাত্র পাচ দিন আগে ঈদুল আযহা ছিল। আজকাল দুই ঈদের সময় কক্সবাজার, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে এমনটা পরিলক্ষিত হয়। এখন মানুষ ঈদের ছুটিতেও বিনোদন কেন্দ্রগুলো বা সমুদ্রসৈকতে চলে যায়।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অন্যতম আকর্ষণ হলো, মাছের বারবিকিউ। দশ বারোজন ভেন্ডার
মাছ বিক্রি করছে, তাদের চারপাশে প্রচন্ড ভিড় । মাছ পছন্দ করে দিলেও দরদাম ঠিক হলে, তারা বিশ মিনিটের মধ্যে বারবিকিউ করে দেয়।
মাছ কেনাকাটা,দরদাম করা,
মাছ খাওয়ার হুটোপুটি ইত্যাদি চাঞ্চল্যকর জিনিসগুলা পর্যবেক্ষণ করলাম। তারপর কিছুক্ষণ বিচ চেয়ারে আধা শোয়া অবস্থায় সময় কাটালাম।
অন্ধকারে সমুদ্র ঢেউের তাণ্ডব উপভোগ করার মতো,
ঢেউয়ের পর ঢেউ তীরে এসে আছড়ে পড়ছে, সাথে সাদা আলোর বিচ্ছুরণের বিস্ময়কর খেলা।
সাহিত্যিক শঙ্করের সেই জাহাজের ডেকে , মুরগীর খাচায় আশ্রয় নিয়ে সামুদ্রিক ঝড়ের বর্ণনা মনে পড়ল। ঢেউ আর ঢেউয়ের উপর সাদা আলোর বিচ্ছুরণের কথা তখনই প্রথম জেনেছিলাম।
আমরা সমুদ্র সৈকত দিয়ে হাটতে হাটতে যেখানে মার্কেট আছে সেখানটায় গেলাম। বালির মধ্যে সহজে হাঁটার জন্য স্যান্ডেল কিনলাম।
একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছি সেটা এই যে, এই সমুদ্র সৈকতের বালুতে পা আটকে আটকে যায় না,
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এর মত। এখানে জুতা বা কেডস পরেও হাঁটাচলা করা যায়, যা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অসম্ভব।
রাত দশটা হয়ে গেছে,
হোটেলের দিকে চললাম। ইজিবাইক খুজতেছিলাম —হঠাৎ একজন পাশ থেকে বলে উঠলো, স্যার,
আমার গাড়িতে ওঠেন।
পিছন ফিরে কোন গাড়িটারি দেখলাম না, দাঁড়িয়ে আছে একটা কিছুটা সুসজ্জিত ভ্যান গাড়ি।
লোকটি বলে উঠলো, এটাই আমার গাড়ি!!