৫২বছর আগের একটি সন্ধ্যা

0

১৯৬৮সালের কথাঃ ক্লাস নাইনে পড়ি।
বাসায় আয়োজন করেছিলাম একটি বিনোদন অনুষ্ঠান।
তখন আমরা গ্রেটার রোড এ থাকতাম,রাজশাহী লক্ষ্মীপুর গার্লস স্কুলের পাশে।
আমি এইটে প্রথম গ্রেডে স্কলার্শিপ পেয়েছিলাম। আমি খুশি ও পরিবারের সবাই খুশি ও বন্ধুরাও খুশি। তাই ভাবলাম একটি উৎসব করা যাক এই উপলক্ষে। তাই একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলাম।
পাশের বাড়ির হরি কাকা আলোকসজ্জা ও সাজ-সজ্জার দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি দুপুর থেকেই দৌড়াদৌড়ি করছেন। শেষমেষ মেইন লাইনে কানেকশন দিতে গিয়ে বিপত্তি ঘটলো, শর্ট সার্কিট হয়ে সব অন্ধকারে ঢেকে গেল।
আব্বা খুব রেগে গেলেন এবং ওনাকে বকা দিলেন। তারপর ইলেকট্রিক ডিপার্টমেন্টকে ফোন করেন।লোক আসলো ও
প্রায় এক ঘণ্টা পর বাতিও আসলো।
ইতিমধ্যে হ্যাজাক লাইট এ অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল, পাড়ার এক মাস্তান ভাই হেজাক লাইক নিয়ে আসলো, বলল ৫ টাকা ভাড়া দিতে হবে।
যাইহোক যখন ইলেকট্রিক বাতি জ্বলে উঠলো তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম।
সেই সময় এই ধরনের অনুষ্ঠান খুব কমই হতো, তাই আমাদের ছোটও বড় রা আগ্রহ নিয়ে এসেছিল।
সবাই বসেছিল আমাদের উঠোনে। অবশ্য চেয়ার। পাশের বাড়ির চাচীর থেকে স্টেজের পর্দা নিয়ে এসেছিলাম, ওনার ডাইনিংয়ের পদ্মা। হঠাৎ পদ্মার একটি হোক ছুটে গিয়েছিল, ভয় পেয়েছিলাম। চাচীর সুখের দামে পদ্মা।

অনুষ্ঠানের জন্য আমরা একটা নাটকের রিহার্সেল দিয়েছিলাম। যদি এমন হতো, নাম।
আমি ছিলাম নায়ক, আজাদ ছিল বাবা, শামসুল আলম ছিল চাকর। নাটক ভালই চলছিল, কিন্তু
স্টেজে যখন বাবার ঢোকার কথা তখন চাকরের ভূমিকার শামসুল আলম ঢুকে গেল।
আমিতো রেগে স্টেজ থেকে বেরিয়ে গেলা, বলতে বলতে তুই বাবা হলে কিভাবে, চাকর না তুই!
ভিতরে গিয়ে দেখছি আজাদ পাড়ার এক মেয়ে,শিরিন এর সাথে শাড়ি পরা শিখছে, ওরা তাকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে। আমি অনেক রাগ করলাম, নাটক ভেস্তে গেল।
এরপরে অন্যান্য অনুষ্ঠান শুরু হল।
কৌতুকের জন্য একজন বন্ধু ছিল, নামটা মনে নেই।
সেই অনুষ্ঠান বেশ জমিয়ে ফেলেছিল। মনে পড়ে আমার আব্বা হাততালি দিয়েছিলেন ও হেসেছিলেন।তারপর গান।
আজাদের গান ও কাঞ্চনের গান। অনুষ্ঠান বেশ মেতে উঠেছিল।
তারপর পাড়ার মেয়ে, শিরিনের একটি নিত্য।
অনুষ্ঠান কিছুটা সফল, কিছুটা অসফল এরকমই ছিল।
এই চেষ্টায় সবাই খুশি ছিল। অনুষ্ঠানের শেষে পাড়ার এক বোন, যতদূর মনে পড়ে নাম রোজি আপা,
সবাইকে গিয়ে বলল, ফারুক বৃত্তি পেয়েছে, তাই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
সবাই হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাল।

জীবনের প্রথম যেকোনো কাজ হয়তো সারাজীবন এমন থাকে।
তাই ওই বিনোদন অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা ছিল আমার জীবনের প্রথম।
তাই হয়তো এখনও স্মরণীয় স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *