আবুধাবিতে প্রথম রাত্রি – দ্বিতীয় পর্ব
আমাদেরকে সকলকে নুরুদ্দিন ভাইয়ের বাসায় নিয়ে আসা হল। আমরা কয়েক জনকে ওনার বাসার ভিতরে স্থান পেলাম । সেখানে মানিকগঞ্জে থাকার সময়ে আমাদের প্রতিবেশী পাকবাগিচার ছেলে শহীদের সাথে দেখা হয়ে গেল। শহীদও আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। সে তিনদিন আগে আবুধাবিতে এসেছে এবং ওমর খৈয়াম হোটেলে চাকরি পেয়েছে। নাইট শিফটের বিড়ম্বনার জন্য পরে স্টোরে চলে যায়। পরবর্তীতে একসময় হোটেলের বারের দায়িত্ব পেয়ে যায়,
তখন কাড়িকাড়ি অবৈধ টাকার ছড়াছড়ি।
শহীদ আমাকে নিয়ে বিল্ডিং এর নিচের কোল(cool) বারে চলে আসলো। আবুধাবি, দুবাই প্রতিটি বিল্ডিংয়ের নিচে দোকানপাটের সমারোহ, এবং একটি
কোল বার থাকে,
যেখানে জুস,কোক, ঠান্ডা জাতীয় সবকিছু পাওয়া যায়।
শহীদ আমাকে ঠান্ডা কোকওএক স্লাইস ফ্রুট কেক খাওয়ালো এবং এক প্যাকেট 555 সিগারেট পকেট এ ভরে গেল। ওই বাড়িতে নুরুদ্দিন ভাই,
স্ত্রী কন্যা ও তার ছোট ভাইকে নিয়ে থাকতে। তার সাত বছরের মেয়ে রানু, পরবর্তীতে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের এয়ার হোস্টেস হয়েছিল।
পরবর্তীতে একবার সেলিম ভাই, আনোয়ার ভাই, আমিও আলমগীর, প্রত্যেকে বউসহ সারজাহ র মেরিডিয়ান হোটেলে ছিলাম দুই রাত্রী। আলমগীর তার কোম্পানির সৌজন্যে ডিস্কাউন্টে হোটেল বুক করেছিল। খুব সম্ভবত আমাদের সাথে কল্পও ছিল। ওই সময়ে একটি গাড়ি ড্রাইভ করেছিলেন সেলিম ভাই, আর
একটি গাড়ি ড্রাইভ করেছিল, নুরুদ্দিন ভাই এর, ছোট ভাই, আনোয়ার।
সন্ধ্যায় আমাদেরকে পার্শ্ববর্তী একটি ফ্লাটে নিয়ে যাওয়া হল, আমরা সংখ্যায় প্রায় 40 জন।
ওই ফ্ল্যাটে তিন চারটা রুম ছিল, কিন্তু কোন আসবাবপত্র ছিল না, শুধুমাত্র একটি ডিভান ছাড়া। আলমারিতে একটি খালি মদের বোতল পাওয়া গেল। আমরা সবাই অবাক হয়ে গেলাম। এই আরবদেশে মদের বোতল কিভাবে? মনে পড়ে গেল,
এক মুরুব্বী আমাকে বলেছিল,
আরব দেশে গিয়ে প্রথমেই
আরব দেশের মাটিতে সেজদা করবে,
অনেক পবিত্র মাটি!
রাত হলে সবাই মেঝের মধ্যে শুয়ে পড়ল, কোন তোশক নাই কোন চাদরও নাই।
আমাকেও টমেটোকে ডিভানটি দেওয়া হল। খাটো ও মোটা ছিল বলে টমেটো উপাধি পেয়েছিল ওই ছেলেটি। আমার তত্ত্বাবধানে সে ইলেক্ট্রিশিয়ান হয়েছিল। পরবর্তীতে ভুয়া ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট দিয়ে দুবাই পাওয়ার প্লান্টে ভাল চাকরি পেয়ে গিয়েছিল।
আমিও টমেটো ঘুমের প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু দুজনের ডিভানের মধ্যে জায়গা হচ্ছিল না। তাই একপর্যায়ে আমি উত্তর দিকে মাথা দিলাম আর টমেটো দক্ষিণ দিকে মাথা দিল। প্রায় ঝুলন্ত অবস্থায় রাত কেটে গেল।
এটাই আবুধাবিতে আমার প্রথম রাত্রি যাপন।
রচনাকাল ঃ
শনিবার ০১-১০-২২
রবীন্দ্র সরোবরে সিঙ্গারা খেতে খেতে,
সকাল আটটা।