লাল কাঁকড়ার দেশ
১৭৭৪ সালে মিঠা পানির জন্য রাখাইনরা কুয়া খনন করে। সেই থেকে অঞ্চলটির নাম কুয়াকাটা হয়ে যায়।
কুয়াকাটার লেবুর চর বা লেবু বাগানের এর কাছাকাছি সমুদ্র সৈকতে লাল কাকড়ার দেশ।
ঠিক পাঁচটার সময় ইজিবাইক চড়ে লাল কাঁকড়ার দেশের দিকে রওনা দিলাম। রাস্তা অনেক জায়গায় অনেক সরু, এখানে গাড়ি নিরাপদে নাও যেতে পারে যদিও দুই একটি গাড়ী দেখেছি। মাঝখানে কিছুটা অংশ বড় রাস্তা। আধঘন্টা পর বেড়িবাঁধের কাছাকাছি পৌছালাম।মাটি থেকে প্রায় বিশ ফুট উপরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ হচ্ছে, মাটি ফেলা হয়েছে মাত্র । এব্রো থেব্রো শক্ত মাটির উপর দিয়ে ইজিবাইক চলল। এরকম রাস্তার উপর দিয়ে ইজি বাইকের যাত্রাটা খুব একটা নিরাপদ ছিল না। কিছুদূর গিয়ে ইজিবাইক নিচের দিকে সমুদ্র সৈকতে নামার প্রস্তুতি নিল। আমরা ইজিবাইক থেকে নেমে পড়লাম। সমুদ্র সৈকতের একপাশে সারিসারি পরিত্যক্ত নৌকা উপুড় অবস্থায় পড়ে আছে। এক পাশে এক সময় সময়ের সাক্ষী হিসেবে বেশ কিছু গাছের কান্ড দাঁড়িয়ে আছে ;
এক সময় অনেক গাছপালা ছিল,
এখন শুধু কাণ্ডগুলো দাঁড়িয়ে আছে, কালের সাক্ষী হয়ে। যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি গ্রামের ছবি। কিছুটা দূরে আরো ভয়াবহ অবস্থা। ১০ ইঞ্চি বা ১২ ইঞ্চি মোটা মোটা কান্ডের সমাহার।শুধু কাণ্ডগুলো অবশিষ্ট আছে, যেন
গাছগুলোকে করাত দিয়ে কাটা হয়েছে ।
ইজিবাইকের চালক বলল, ২০০৭ সালের সিডরের তাণ্ডবে এমন ধ্বংশযজ্ঞ হয়েছে।
ইজিবাইক এগিয়ে চলল। একপাশে উত্তাল সমুদ্র, আরেক পাশে স্থলভূমি, গাছপালা, কোথাও কোথাও আবার ঝাউবন। প্রকৃতির এই নিদারুণ সৌন্দর্য,
আকণ্ঠ সুধা পানের মতো উপভোগ করতে লাগলাম। মনে পড়লো ২০০২/০৪
পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে খোলা জীপগাড়ি চলতো । সমুদ্র সৈকত ঘেঁষে জিপ দিয়ে হিমছড়ি পর্যন্ত যাওয়া যেত। আমার সেই সৌভাগ্য হয়েছিল। একদিকে বিশাল উঁচু উচু পাহাড়, অন্যদিকে উত্তাল সমুদ্র,
অভিভূত হয়ে জিপের উপর দাঁড়িয়ে আনন্দের চিৎকার – ধ্বনি শুরু করেছিলাম।
কোন এক অদ্ভুত কারনে, আমাদের সুন্দর ও আনন্দের স্মৃতিগুলো মনের কোঠায় সুপ্ত অবস্থায় থাকে। একটু খোঁচা পেলেই ঝরনার পানির মত কলকল করে বেরিয়ে আসে বিস্তৃত স্মৃতিসুধা।
আবার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ফিরে আসি।ইজিবাইক আরও কিছু দূর গিয়ে থেমে গেল।
ইজিবাইকের চালক
স্থল ভাগের দিকে হাটতে লাগল, তারপর উপুড় হয়ে বসে বালুর মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিল,
খুড়াখুড়ি শুরু করলো। হঠাৎ বালুর ভিতর থেকে একটা লাল বড় কাঁকড়া ধরে আনলো। এখানে বালুর নিচে ঝাকে ঝাকে লাল কাঁকড়ার বাসস্থান।
ইজিবাইক চালক কাঁকড়াটি হাতে চেপে ধরে সমুদ্রসৈকতের দিকে চলল। তারপর হঠাৎ কাঁকড়াটিকে বালুর উপর ছেড়ে দিলো। কাকড়াটি বুলেটের গতি নিয়ে ছুটতে থাকলো এঁকেবেঁকে, একটা গর্তের খোঁজে।
এবার লাল কাকড়ার দেশ ছেড়ে ইজিবাইক সামনের দিকে চলল, লেবুর চরের দিকে। ওখানটায় নেমে পড়লাম। বিশাল ঝাউবন। এক পাশে একটি ভ্যান গাড়ি ঘিড়ে বেশ জটলা।লেবুর চরের নামের সম্মানে লেবুর শরবত বিক্রি হচ্ছে।
রচনাকাল ঃ
সকাল ৭টা।
২০-০৭-২০২২