কুয়াকাটার দিনলিপি

0


দ্বিতীয় পর্ব

প্রথম দিন বিকালে হোটেলের সামনে পয়চারি করার সময় দেখালাম একটা ইজিবাইক দাঁড়িয়ে আছে।
জিজ্ঞেস করাতে ইজিবাইকের চালক জবাব দিল, গেস্টকে কুয়াকাটা দেখাব।আমি আগামীকালের জন্য তাকে বুক করলাম। বললো,সকাল সাড়ে দশটায় বের হতে হবে তিন ঘন্টার জন্য, তারপর আবার বিকাল সাড়ে চারটায় তিন ঘন্টার জন্য। ২০০০ টাকাতে সে রাজী হল।
যথারীতি পরদিন সকালে সাড়ে দশটায় ইজিবাইক চড়ে রওনা দিলাম রাখাইন পল্লীর দিকে। ওখানে প্রথমে বৌদ্ধ মন্দির দেখব তারপর রাখাইন পল্লী,
মিষ্টি পানির কুয়া ইত্যাদি। ৪০/৪৫ মিনিট পরে রাখাইন পল্লী কাছে পৌছালাম। বলাবাহুল্য ইজিবাইকে অনেক ঝাকি খেতে হল। ভাগ্যিস নাস্তাটা নয়টায় সেরে ফেলেছিলাম, ভরা পেটে বিপদ হতে পারত।
বৌদ্ধ মন্দিরে ঢুকলাম, জুতা খুলতে হলো। বিশাল পিতলের বুদ্ধমূর্তি, ওজন ৯০ মন।দেখলাম কতগুলা ১২/১৩ বছরের বাচ্চা মাটিতে শুয়ে আছে,
চুপচাপ গল্প করছে। ওদের চেহারায় শান্তশিষ্ট ভাব, প্রশান্ত হৃদয়ের অধিকারী। রাখাইন পল্লীতে যাদের দেখলাম তাদের ব্যাপারে একই বক্তব্য। একটা নিভৃত অজ পাড়াগাঁয়ে মানুষ যে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে তার নমুনা দেখলাম। সুখের জন্য সম্পদের বাহুল্য বা আসবাবপত্রের বাহুল্য,বা চাকচিক্যের প্রয়োজন নাই —-প্রয়োজন পারস্পারিক ভালোবাসার মাধ্যমে জীবনটা কাটানো, যেটা ইট-পাথর ঘেরা শহরে পাওয়া দুষ্কর।
বুদ্ধ মন্দিরের একজন,
দরিদ্র ও দুস্থ বাচ্চাদের জন্য টাকা চাইল। ২০০ টাকা দিয়ে বললাম, রশিদ দাও। আবু সালেহ,ইজিবাইকের চালকের নাম।বয়স ৩০ হবে। খুব আন্তরিকতার সাথে আমাদেরকে গাইড করেছে এবং আমাদের ছবিও তুলে দিয়েছে।
ছেলেটি হঠাৎ বলে উঠলো, রাখাইন দরিদ্র বাচ্চাদের জন্য টাকা দেওয়াটা কী ঠিক হলো? ওরা তো মুসলমান নয়।
গুনাহ হবে।
ইসলাম যে বিশ্ব মানবতার সাথে সাংঘর্ষিক নয়,
সেটা সাধারণ মুসলমানরা বুঝেনা।তাই আমি কিছু বললাম না।
পাশেই মিষ্টি পানির কুয়া। এক সময়ে এই অঞ্চলে এই কুয়া ছাড়া আর কোন ভাবেই মিষ্টি পানি পাওয়া যেত না। রাখাইন পল্লীতে ঢুকলাম। লাল গেরুয়া পরা এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী কে দেখলাম। এক বয়স্ক মহিলা বলল, রাখাইন পিঠা খাবেন? পিঠা রেডিমেড নাই তৈরি করে দিবে —-তাই রাখাইন পিঠা খাওয়া আর হলো না!
পাশেই রাখাইন মার্কেট। আমাদের আড়ং এ, যা পাওয়া যায় ওই ধরনের নানা জিনিসপত্রও কাপড়ের সমাহার।
মুগ্ধ হয়ে ওই সব জিনিসের কেনাকাটা অনেক করেছি কক্সবাজারে। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর ব্যবহার হয় না, পড়ে থাকে। তাই মার্কেটে কোন কেনাকাটা করলাম না।
একপাশে ডাব বিক্রি হচ্ছিল। প্রতিটা ১০০ টাকা। আবু সালেহ ডাবের দাম শুনে মন খারাপ করলো। বুঝলাম এগুলো অর্ধেক দামে বিক্রি হয়। ডাব খেতে খেতে দেখলাম পাশের দোকানে বাংলা কলা ঝুলছে। গাছপাকা বলে অত্যন্ত সুস্বাদু।
এরপর আমাদের ফিরতি যাত্রা শুরু হলো। তখন প্রায় দুইটা বাজে।
চলবে–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *