ছুরি
যখন ক্লাস ফোর, ফাইভে পড়তাম,
তখনকার কথা।
অর্থাৎ ১৯৬৫,৬৬ এর কথা।
তখন মাস্তান শব্দটি প্রচলিত ছিল না। সরাসরি গুন্ডা শব্দ প্রচলিত ছিল। যারা বখাটে তাদেরকে গুন্ডা বলা হত। যদ্দুর মনে পড়ে তখনকার গুন্ডারা সত্তিকারের গুন্ডা ছিল, শক্তিশালী ছিল। চেলা -পিলা নিয়ে মারপিট করতো না;
একাই মারপিট করে বিরত্ব দেখাতে পারত, অনেক সাহস ছিল তাদের।
শুনতাম গুন্ডাদের পকেটে, ছুরি থাকতো, এ নিয়ে আমার অনেক কৌতূহল তৈরি হয়েছিল । আমার এক কাকা বলতেন,
অমুক গন্ডার হাতে বাঁশি থাকে, বাশির ভিতরে ছুরি থাকতো।
সেই সময় আমার ইচ্ছা হলো, পকেট একটি ছুরি রাখা, যদিও তখনও আমি হাফ প্যান্ট পরতাম।
সিলেট কোট -কাছারির আশেপাশটা সব সময় জমজমাট থাকতো। ছোট ছোট জটলা, আর ফুটপাতের ওপর পসরা সাজিয়ে বসে থাকতো অনেকে।
জটলার মধ্যে কেউ একজন মনমুগ্ধকর ভাবে গল্প বলতো, আর ফাঁকে ফাঁকে কোন একটা ঔষধ, বা মলম বিক্রি করার চেষ্টা করত।
ওই গল্পগুলোর অনেক স্মৃতি আমার মনের মধ্যে এখনও জ্বলজ্বল করে।
এখন আসল কথায় আসি,
তখন ওই ফুটপাতে প্রকাশ্যে ছুরি বিক্রি হতো। আমি হঠাৎ করে একটা ছুরি কিনে ফেললাম, স্প্রিং ছুরি,টিপ দিলে শরাৎ করে ছুরি বেরিয়ে পড়ে। হঠাৎ সেই কাকা এটা দেখে ফেললেন। সঙ্গে সঙ্গে হাত ধরে টেনে আমাকে, কোর্ট-কাচারির সেই দোকানদারের কাছে নিয়ে গেলেন, অনেক ধমক দিলেন দোকানদারকে,
দোকানদার ছুরি ফিরিয়ে নিল।
আমার কিন্তু ছুরির সখ রয়েই গেল। তারপর সুযোগ বুঝে আরেকটি ছুরি কিনলাম। গোল্ডেন কালারের খাপ। খাপের ভিতর ছুরি লুকিয়ে থাকতো।খাপটা একটু টেনে ধরলে ছুরিটা বেরিয়ে পরতো। কোথা থেকে পয়সা জোগাড় করেছিলাম কিছুই মনে পড়ছে না।
ওই ছবিটা আমার হাফ প্যান্টের পকেটে নিয়ে ঘুরতাম। ছুরিটা আমার খুবই প্রিয় হয়ে গিয়েছিল এবং সব সময় লুকিয়ে রাখতাম।
ছুরির ব্যাপারে এর বেশি কোন স্মৃতি মনে নেই।