ফুটবল কিনতে ৫-৬ জন হেঁটে হেটে সুরমা নদীর পাড় দিয়ে প্রায় ছুটে চলেছি বন্দরবাজারের দিকে। তখন ক্লাস ফাইভের ছাত্র। আমরা সবাই মিলে পয়সা জমিয়েছি ফুটবল কিনার জন্য। যখন তিন টাকা জমে গেল তখনই সবাই মিলে ছুটলাম ফুটবল কিনতে বন্দরবাজারের দিকে। এখনো মনে পড়ে সেই সিলেটের রংমহল সিনেমার উল্টা দিকে একটি দোতলা কাঠের স্পোর্টসের দোকান প্রত্যাশিত ফুটবলটি কিনলাম। ফুটবল হাতে নিয়ে হই হই করে সবাই ফিরে এলাম নিজ পাড়ায় ছোট্ট ফুটবল মাঠে
যেন বিশ্বকাপ জয় করে ফেলেছি।
তারপর মাসেই প্রথম ফুটবল ম্যাচ খেললাম কোর্ট কাচারির বিরাট মাঠে। সঠিক মনে পড়ছে না কিন্তু বিধ্বস্ত হয়ে ফিরে আসলাম চার পাঁচ গোল খেয়ে।
তবে ক্লাস সেভেনে সিলেট গভমেন্ট পাইলট হাই স্কুলের স্কুল টিমে আমি খেলেছি ক্লাস টেনের বিপক্ষে এবং আমরা জয়লাভ করেছিলাম।
আমি ওই সময় খুব কেরিকেচার করতে পারতাম কিন্তু শর্ট নিতে পারতাম না। তাই ফরওয়ার্ডি এ খেলতাম।
তখন পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন মাঠে ফুটবল খেলা হত
ফুটবলের জয় জয় কার, ক্রিকেট তখন এক পাশে পড়েছিল। আমি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বলের বারি খেয়ে আর ক্রিকেট মাঠে যাইনি।
তবে তখন আমরা সবাই ফুটবল খেলার পাশাপাশি নেশাগ্রস্তের মত ঘুড্ডি ওড়াতাম। মানজা দোয়ায় আমার ভালো নাম ছিল।
মনে পড়ে নিজেরাই কাচের টুকরা এনে গুঁড়ো করতাম। এরা্রুট গাব কাচের গুড়া আর কি কি যেন দিয়ে লেই বানাতাম মাটির হাড়িতে জাল দিয়ে। আরেকটা জিনিসে আমি বেশ ওস্তাদ ছিলাম। খেচাখেচি করে ঘুড়ি টেনে নামিয়ে নিয়ে আসা। দুইটা ঘড়ির সুতাতে যখন গিট্টু লেগে যায় তখন খেচা খেচি শুরু হয়।
আরেকটা মহানন্দের জিনিস ছিল কাটা ঘুড়ির পিছনে দৌড়ে দৌড়ে কাটা ঘুড়িটা হাতে নেওয়ার চেষ্টা করা। অধিকাংশ সময়ে ৪-৫ জন ঘড়িটা ধরত এবং টানাটানিতে ঘুড়িটা ছিড়ে যেত।
আমার দামাল ছোটবেলাটাকে কেটেছে সিলেট শহরে তোপখানা পাড়ায়। আমাদের পাশেই ছিল হিন্দু পাড়া অন্য পাশে ছিল পুলিশ পারা। বিকালে ৩০
৪০ জন ছেলেপেলে একত্রিত হয়ে ধুম ধারাক্কা বিভিন্ন প্রকার খেলাধুলা হৈচৈ মত্ত হয়ে যেত।
খুব শৈশবে আমি নিউলিফ্যান্ট রোডে যখন ছিলাম বাড়ির সামনে বিরাট মাঠ ছিল। ওই মাঠেও তখন অনেক ছেলেমেয়ের আগমন ঘটতো বৈকালে। খুব ঝাপসা হলো সেই স্মৃতিটুকু মনে পড়ে। মিরপুর রোডের পাশে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, তখন সেখানে মাঠের পর মাঠ। একবার রাত্রিবেলা ওখানে ক্যাম্প ফায়ার হয়েছিল। খুবই ঝাপসা স্মৃতি। কিভাবে যেন কিন্ডার গার্ডেনের স্মৃতিও এখনো মনের গহীনে মাঝেমধ্যে ভেসে ওঠে।

তারপর দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর
বিভিন্ন অভিজ্ঞতা দিয়ে জীবনে এগিয়ে গেছে।। মনে হয় হঠাৎ করেই জীবন সন্ধ্যা নেমে আসলো। কাকঢাকা ভোর থেকে জীবন সন্ধ্যা
এক বিরাট অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে বসে আছি। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায় জীবনটা অনেক অনেক সুন্দর অনেক অনেক বৈচিত্র্যময়। তাইতো জীবন সায়ান্যে
আরেকটি বসন্তের জন্য মন
এত উতলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *